কঠোর পরিশ্রম ও সঙ্কল্প মানুষকে কোথায় পৌঁছে দিতে পারে, তা জানার জন্য আপনাকে চিনতেই হবে ঈশ্বরকে। ছিলেন বাগানমালি, পেটের তাগিদে রক্ষীরও কাজ করেছেন। সেই ঈশ্বর সিং বরগা আজ ভিলাইয়ের এক কলেজের অধ্যক্ষ। কেউ হাতে ধরে তাঁকে এই জায়গায় পৌঁছে দেয়নি। কোনও কোটার সুযোগে এই জায়গায়, তা-ও না। মেধার সঙ্গে অক্লান্ত পরিশ্রমই আজ এই জায়গায় নিয়ে এসেছে বছর ৪৮-এর এই ব্যক্তিকে।
তখন বছর উনিশের। সালটা ১৯৮৫। ভারতের বৈতালপুরের ঘুটিয়া গ্রামের স্কুল থেকে পাশ করে, চাকরি খুঁজতে ভিলাই এসে পৌঁছন ঈশ্বর সিং বরগা। একটা কাপড়ের দোকানে সেলসম্যানের কাজ। বেতন মাত্র ১৫০। কিন্তু, ঈশ্বরের জন্য সেটাই তখন অনেক। মাসে ওই টাকার ব্যবস্থা করতে না পারলে, মাঝপথে পড়ার ইতি। তাই চাকরি জুটিয়েই বিএ-তে ভর্তির জন্য আবেদন করেন। তাঁর কাকার সূত্রে ভিলাইয়ের কল্যাণ কলেজে মালিরও কাজ জুটিয়ে নেন ঈশ্বর। ১৯৮৯-এ স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে বেরিয়েছেন। তার মধ্যে অনেকগুলো এবং অনেক ধরনের কাজ করেছেন। মালি, সেলসম্যান থেকে গাড়ি পার্কিংয়ের কাজ, এমনকী কনস্ট্রাকশান কোম্পানির সুপারভাইজার।
স্নাতক হয়ে বেরিয়ে, ওই কলেজেই ক্রাফট টিচার পদে আবেদন করেন। অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে সুযোগও পেয়ে যান। রাতে ওই কলেজেরই রক্ষী। এ জন্য কেউ তাঁকে, জোর করেননি। নিজের ইচ্ছেতেই নৈশরক্ষীর কাজ নেন। শিক্ষক হিসেবে তাঁর দক্ষতা দেখে, কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসার হিসেবে নিয়োগ করে। কিন্তু, সেই চাকরিতেই থেমে থাকেননি ঈশ্বর সিং বরগা। পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। এমএড বিএড এবং এমফিল-ও করেছেন ছত্তিশগড় কল্যাণ শিক্ষা সমিতি পরিচালিত সেই কলেজ থেকে। ঈশ্বর সিং বরগার ওই কঠোর পরিশ্রমের স্বীকৃতি স্বরূপ কলেজ কর্তৃপক্ষ অহেরিতে, তাদের নতুন কলেজ ছত্তিশগড় শিক্ষা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হিসেবে তাঁর নাম প্রস্তাব করেন। সেটা ২০০৫ সাল।
কঠোর পরিশ্রম ও সঙ্কল্প মানুষকে কোথায় পৌঁছে দিতে পারে, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ এই ঈশ্বর সিং বরগা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন