শীতকাল আসি আসি করছে। আর শীতকাল মানেই ভ্রমন পিপাসুদের আনন্দ যাত্রা। অনেকেই এ সময়কে বলেন ট্র্যাভেল সিজন। তাই হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন বাংলাদেশের অপূর্ব সুন্দর এক সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা থেকে । ঢাকা থেকে কিভাবে যাবেন কুয়াকাটা আপনি দুই পথে যেতে পারেন । নদী পথ আর সড়ক পথ । নদী পথে যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে যেতে হবে ঢাকা সদর ঘাট । সেখান থেকে প্রতি দিন পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ৪ টি অত্যাধুনিক লঞ্চ । তবে লঞ্চে যেতে চাইলে অন্তত একদিন আগেই লঞ্চের টিকিত কেটে রাখা ভাল । সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া লঞ্চভেদে ৯০০ - ১১০০ টাকা , ডাবল কেবিন ১৮০০ আর ডিলাক্স (ফ্যামিলি) ২০০০ টাকা । এ ছাড়াও আছে লঞ্চের ডেক যার ভাড়া ২০০ টাকা । আপনি চাইলে লঞ্চেই রাতের খাবার অর্ডার করতে পারেন অথবা নিজের বাসা থেকে নিয়ে যেতে পারেন । লঞ্চের ভ্রমন খুব ই উপভোগ্য । লঞ্চ গুলো ঢাকা থেকে ছাড়ে বিকেল ৪ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টার ভেতর । সকাল ৬ টা বা ৭ টা নাগাদ পটুয়াখালী পৌঁছুবেন । সকাল ৬ টা থেকেই প্রতি ১ ঘণ্টা পর পর কুয়াকাটার বাস ছেড়ে যায় পটুয়াখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে । লঞ্চ ঘাট থেকে বাস স্ট্যান্ড এর ভাড়া ২৫ - ৩০ টাকা । সড়ক পথে যেতে হলে আপনাকে যেতে হবে গাবতলি বাস স্ট্যান্ড । এসি , নন-এসি দুই রকম বাস সার্ভিস ই পাবেন । নন এসি ৫০০ টাকা আর এসি ৬৫০-৭০০ টাকা । সকাল ৮ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত ৪ টা বাস ছেড়ে যায় ঢাকা থেকে । আর নাইট কোচ এর সময় শুরু সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ১০:৩০ পর্যন্ত । আর গাবতলি থেকে দুই একটা বাস সরাসরি কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে ও ছেড়ে যায় তবে সেগুলোর সার্ভিস তেমন ভাল নয় । সড়ক পথে রাস্তার অবস্থা খুব ই ভাল । পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটার ভাড়া জন প্রতি ১০০ টাকা । তবে সন্ধ্যার পর পটুয়াখালির কোন বাস ছেড়ে যায় না।
কুয়াকাটা থাকার জন্য অনেক হোটেল রয়েছে । ৩ স্টার মানের হোটেল আছে দুটো । তাছাড়া আছে সরকারি ডাকবাংলো । এ ছাড়া মধ্যম মানের অনেক ভাল হোটেল রয়েছে । সিঙ্গেল বেড এর ভাড়া এইসব হোটেল ৩০০ টাকার মত । আর ৬-৭ জন থাকার জন্য ৪ বেডের রুম নিতে পারেন যার ভাড়া পরবে ৮০০ টাকার মত । সব হোটেল গুলোই সৈকতের খুব কাছে । কোথায় খাবেন খাবার জন্য কুয়াকাটাতে অনেক রেস্তোরা রয়েছে , তবে অর্ডার দেওয়ার আগে অবশ্যই দামটা জেনে নেবেন ।
কুয়াকাটাতে দেখার মত অনেক কিছুই রয়েছে । সৈকতের কাছেই রয়েছে একটা বুদ্ধ মন্দির যা কিনা আপনার মন কেড়ে নেবে। এই বুদ্ধ মন্দিরের পাশেই রয়েছে কুয়াকাটার সেই বিখ্যাত কুয়াটি। পাশেই আছে রাখাইন মার্কেট । কেনা কাটা যা করার এখান থেকেই করতে পারেন । এখানে রয়েছে অসম্ভব সুন্দর সব তাতের কাজ । আর বার্মিজ আঁচারের পশরা । সৈকত থেকে ৬ কিমি দূরে মিছরি পাড়াতে রয়েছে ৩ তলা সমপরিমাণ উচ্চতার আরেক বুদ্ধ মূর্তি। সৈকতের ঝাউ বন থেকে কিছু দূরেই রয়েছে কুয়াকাটা ইকো পার্ক । খুব ই নয়নাভিরাম পার্ক । এছাড়া কুয়াকাটা থেকে ট্রলারে করে সাগরের মাঝখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন কিছু সময়ের জন্য সাথে দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর মত দেখে আসতে পারবেন সুন্দরবনের কিছু অংশ । সূর্য উদয় হল সাগর পাড়ের আরেক সৌন্দর্য । যারা কুয়াকাটা আসেন তারা কেউ ই এই জিনিশ টা মিস করেন না । সূর্য উদয় দেখতে হলে আপনাকে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে এবং যেতে হবে সৈকত থেকে কিছুটা দূরে কাউয়ার চর নামক জায়গায় । যেতে পারেন মোটর সাইকেলে করে । সূর্য উদয় দেখার দৃশ্য যে একবার দেখেছে সে কখনো ভুলতে পারবে না । এছাড়া কাউয়ার চরে দেখতে পাবেন লাল কাঁকড়ার ছুটোছুটি । কুয়াকাটা তে রয়েছে জেলে পল্লী । সৈকতের পশ্চিম দিকে । চাইলে দেখে আসতে পারেন । আর সমুদ্রের পানি যদি গায়ে লাগাতে চান , তাহলে বিনা দ্বিধায় নেমে পড়তে পারেন সাগরের পানিতে । এখানে কক্সবাজারের মত চোরা বালি টাইপ কিছু নেই। আর কোনো চোরা খাদ ও নেই। সৈকতে যারা বাইক চালাতে চান তাদের জন্য ও আছে সুখবর । কিলোমিটার হিসেবে বাইক ভাড়া পাওয়া যায়। প্রতি কিলো ১০ টাকা। সব শেষে প্রিয়জনের সাথে এক মনে দেখে নেবেন সূর্য অস্তের সেই হৃদয় ছুয়ে দেওয়া দৃশ্য। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল নির্জনতা । ঢেউ এর গর্জন , তীরে আছড়ে পরা আপনাকে অন্ন জগতে নিয়ে যাবে। সাগরের সাথে একাত্ম হয়ার এমন সুযোগ কখনো হারাবেন না
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন