By
Unknown
At
শুক্রবার, আগস্ট ২১, ২০১৫
0
সময় তখন বিকেল ৫টা ২২ মিনিট।। ২১ আগস্ট, ২০০৪ শনিবার ।বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাবেশে হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছিল। সমাবেশ শেষে সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল হওয়ার কথা। ছিলাম মন্চের পাশেই যেখানে আদা চাচা দাড়িয়ে ছিলেন ।মিছিল start করার জন্য কিছু দলীয় মহিলা যারা ব্যানার হাতে মিছিলের সামনে থাকবেন তাদেরকে ডেকে just একটু এগিয়ে --তখনই কিছু বুঝে ওঠার আগেই গ্রেনেড বিস্ফোরণের বীভৎসতায় মুহূর্তেই রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। রক্তগঙ্গা বয়ে যায় এলাকাজুড়ে।, নারকীয় উল্লাসে মানুষ মারার উৎসব হয়েছিল সেদিন । বেচেও গেলাম সেদিন কিছু বুঝে ওঠার আগেই । লোকজনের কি ভয়ংকর ছুটাছটি, চিৎকার, হাহাকার আজও যেন চোখে ভাসে । কারও যেন এমন দৃশ্য দেখতে না হয় ।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে তত্কালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সমাবেশে দেশের ইতিহাসের নৃশংসতম গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার এগারো বছরেও শেষ হয়নি। তবে মামলার প্রধান কৌঁসুলী সৈয়দ রেজাউর রহমান শুনিয়েছেন আশার কথা। তিনি বলেছেন, চলতি বছরেই মামলার বিচার কাজ শেষ হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
পুরনো ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন এজলাসে ঢাকার ১নং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে চলছে মামলার বিচার কাজ। মামলার ৪৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৭৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে গত ১৯ আগষ্ট। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে ২৪ আগষ্ট। সব সাক্ষীরই সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে কী না -এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্যই আগে নেয়া হচ্ছে। তবে কত জনের সাক্ষ্য নেয়া হবে তা আগাম বলা সম্ভব না।
সূত্র মতে, মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এদের মধ্যে কারাগারে রয়েছেন ২৬ জন, জামিনে ৮ জন আর পলাতক রয়েছেন তারেক রহমানসহ ১৮ জন। পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ইন্টারপোলে রেড নোটিস জারি করা হলেও কাউকে ফেরানো যায়নি। এদের মধ্যে দু’একজনের অবস্থান জানা গেলেও বাকিদের অবস্থানও চিহ্নিত করা যায়নি।
চার বছর পর চার্জশিট:দেশব্যাপী সন্ত্রাস বিরোধী ও বোমা হামলার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ওই সমাবেশের আয়োজন করেছিল আওয়ামী লীগ। আর সমাবেশ শেষ হবার মুহূর্তে চালানো হয় পৈশাচিক এই গ্রেনেড হামলা। এ হামলায় নিহত হন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী বেগম আইভী রহমানসহ ২৪ জন। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তত্কালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। আহত হন প্রায় ৪শ’ নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ। এদের অনেকেই এখনও শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে দুঃসহ জীবন কাটাচ্ছেন। ঘটনার রাতে (২১ আগষ্ট) বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের নির্দেশে তড়িঘড়ি করে মতিঝিল থানায় পুলিশ বাদি হয়ে পৃথক দুইটি মামলা করে। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ থানায় মামলা করতে গেলে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়।
এরপর ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে চারদলীয় জোট সরকার। হামলার দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয় আওয়ামী লীগের উপর। সাজানো হয় জজ মিয়া নাটক। বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়ায় মামলার কার্যক্রম থেকে যায়। পরবর্তীতে ওয়ান ইলেভেনের সময় ২০০৭ সালে মামলার কার্যক্রম নতুন করে শুরু হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত হন সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল কবির। কিন্তু মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তাকে বার বার হোঁচট খেতে হয়। কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার (যারা বর্তমানে মামলার পলাতক আসামি) রোষানলে পড়তে হয় তাকে। মামলার অন্যতম আসামি হামলার গ্রেনেড সরবরাহকারীর ভাই বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুকে গ্রেফতার করার সময় সরাসরি তাকে হুমকি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তার পরও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন অনড়। তিনি কোনো কিছুকে তোয়াক্কা না করে ২০০৮ সালের ১১ জুন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। শুরু হয় বিচার কাজ। ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ২০০৯ সালের ৯ জুন পর্যন্ত ৬১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল।
কিন্তু প্রথম অভিযোগপত্রে গ্রেনেড সংগ্রহ, সরবরাহকারী, আক্রমণের পরিকল্পনাকারী আসামিদের শনাক্ত এবং অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় ২০০৯ সালের ৩ আগষ্ট রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনক্রমে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এবার মামলাটি অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই প্রথম অভিযোগপত্রের ২২ জন ছাড়াও তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১২ সালের ১৮ মার্চ বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সম্পূরক চার্জশিটের ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ফের বিচার শুরু হয়।
পলাতক যারা: তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, হাফেজ ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, রাতুল বাবু, ডিএমপি’র সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান, ডিএমপির সাবেক ডিসি (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন, মাওলানা তাজউদ্দিন (গ্রেনেড সরবরাহকারী, বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী), ঝিনাইদহের ইকবাল, মাগুরার খলিলুর রহমান, ঢাকার দোহারের জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর ও গোপালগঞ্জের মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার। তাদেরকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করা হয়েছে। আর ভারতের তিহার কারাগারে আটক রয়েছেন হুজির সদস্য আনিসুল মোরসালিন ও মহিবুল মোত্তাকিন।
জামিনে রয়েছেন ৮ জন:পুলিশের সাবেক তিন মহাপরিদর্শক (আইজি) আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক, খোদা বকস চৌধুরী, সিআইডির সাবেক তিন কর্মকর্তা রুহুল আমিন, মুন্সী আতিকুর রহমান, আবদুর রশিদ, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক এবং ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক বিএনপি নেতা কাউন্সিলর আরিফুর রহমান।
কারাগারে ২৬ জন : সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, সামরিক গোয়েন্দা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক আব্দুর রহিম, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ, মাওলানা ফরিদ, মুফতি আব্দুল হান্নান ওরফে সাব্বির, হুজির সাবেক আমির মাওলানা আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ বাট, জঙ্গি আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মুফতি আবদুল হান্নান মুন্সী ওরফে আবুল কালাম ওরফে আবদুল মান্নান, মহিবুল্লাহ মফিজুর রহমান ওরফে অভি, শরিফ শাহেদুল আলম বিপুল, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, শাহাদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, আবদুস সালাম পিন্টু, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ, উজ্জ্বল ওরফে রতন, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক ও বরিশালের মাওলানা আবু বকর।
You Might Also Like
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন