জেলখানা থেকে ব্লগারদের হত্যার পরিকল্পনা
জেলখানা থেকে ব্লগারদের হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে থাকা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সংগঠক জসীমউদ্দিন রাহমানি ব্লগারদের হত্যার পরিকল্পনার কথা জানতেন।
তিনি ওই পরিকল্পনার কথা নিজের ছোট ভাই আবুল বাশারের মাধ্যমে সংগঠনের অপর সদস্যদের জানাতেন। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) হেডকোয়ার্টার্সে মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান এ সব তথ্য জানান।
প্রসঙ্গত, সোমবার রাতে রাজধানীর ধানমণ্ডি ও নীলক্ষেত এলাকা থেকে অভিজিৎ রায় ও অনন্ত বিজয় হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়। পরে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অনলাইন কার্যক্রমের দায়িত্বে থাকা সক্রিয় সদস্য সাদেক আলী মিঠুকে (২৮) নীলক্ষেত এলাকা থেকে র্যাব-৩ আটক করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অর্থ সরবরাহকারী তৌহিদুর রহমান (৫৮) ও মো. আমিনুল মল্লিককে (৩৫) ধানমণ্ডি এলাকার স্টার কাবাবের পাশের গলি থেকে আটক করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘ব্লগার হত্যাকাণ্ডে রমজান, সিয়াম, নাঈম, জুলহাস বিশ্বাস, জাফরান আল হাসান ও সাদেক নামে কয়েকজন অংশ নিলেও শুধু সাদেক র্যাবের কাছে গ্রেফতার হয়েছে। বাকিরা এখনো পলাতক। হত্যাকাণ্ডের তিন ঘণ্টা আগে খুনীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের মাঠে একত্রিত হয়। অভিজিৎ রায় ও অনন্ত বিজয় হত্যাকাণ্ডে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৪-৫ জন সক্রিয় সদস্য সরাসরি অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে গ্রেফতার হয়েছে সাদেক। এ ছাড়া পলাতক রমজান ও নাঈম অভিজিৎ ও অনন্ত হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘তৌহিদুর যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও একজন আইটি বিশেষজ্ঞ। নব্বইয়ের দশকে তৌহিদুর যুক্তরাজ্যে যান এবং আইটি বিষয়ে বিশেষ পারদর্শী হয়ে ওঠেন। পরবর্তী সময়ে জসীমউদ্দিন রাহমানির (আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সংগঠক) মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এ সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। রাহমানির অনুপস্থিতিতে সংগঠনের সার্বিক আর্থিক ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন তিনি।’
গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য উল্লেখ করে কমান্ডার মুফতি মাহমুদ বলেন, ‘অভিজিৎ ও অনন্ত বিজয়ের সকল কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ এবং তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখতেন তৌহিদুর। সাদেকের সঙ্গে রাহমানির পরিচয় হয় ২০০৭ সালে। এর পর থেকে সেও এ সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে এবং ২০১২ সাল পর্যন্ত রাহমানির স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। সাদেক ২০১১ সাল থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য হওয়ার পর কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের দিকনির্দেশনা নিয়ে আসত।’
মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক আরও বলেন, ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের যে সকল সদস্য আত্মগোপনে ও পালিয়ে দেশের বাইরে যেতে চায় তাদের বিভিন্ন নামে পাসপোর্ট তৈরি করে দিত আমিনুল। রাহমানি জেলে থাকার সময়ে সাদেক ও তার আপন ছোট ভাই আবুল বাশার বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের দিকনির্দেশনা দিত। দিকনির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী সময়ে তৌহিদুর হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করত।’
অভিজিৎ হত্যা
২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাত সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে দুর্বৃত্তরা অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী নাফিজা আহমেদকে কুপিয়ে জখম করে। আহত অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অভিজিৎ।
অভিজিৎ ও তার স্ত্রী দু’জনই আমেরিকা প্রবাসী। তিনি মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও লেখক। তার লেখা ৯টির বেশি বই রয়েছে। অভিজিৎ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অজয় রায়ের ছেলে।
অনন্তবিজয় হত্যা
১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজার এলাকায় অনন্ত বিজয় দাশ নামের লেখক ও ব্লগারকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
সকালে সুবিদবাজার এলাকায় তার বাসা থেকে বের হওয়ার পর দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে অনন্তকে গুরুতর জখম করে। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
অনন্ত মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার ছিলেন। বিভিন্ন সময় তিনি বস্তুবাদ ও যুক্তিবাদ নিয়ে ব্লগে লিখতেন। এ নিয়ে তার কয়েকটি বই রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিতের একটি বইয়ের ভূমিকা লিখেছিলেন অনন্ত। এ ছাড়া ‘যুক্তি’ নামের একটি পত্রিকা সম্পাদনাও করতেন তিনি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন