একটা প্রাণী কিভাবে উদ্ভিদ হতে পারে? কিংবা একটা উদ্ভিদই বা কিভাবে প্রাণী হতে পারে? এ তো অসম্ভব! এ অসম্ভব ঘটনাও ঘটে দুনিয়ায়। এক ধরনের শ্লাগ আছে, যারা এক জীবনেই প্রাণী ও উদ্ভিদ- দুভাবেই জীবনযাপন করে!
এমনিতেই শ্লাগ এক অদ্ভুত প্রাণী। অনেকটা খোলসহীন শামুকের মতো। আর কয়েক ধরনের শ্লাগ আরো অদ্ভুত। তারা শেওলা জাতীয় উদ্ভিদ খেয়ে খেয়ে একসময় নিজেরাই শেওলার মতো উদ্ভিদ হয়ে যায়। এরা শেওলার প্রাণরস চুষে খেয়ে নেয়। তাই এদের আরেক নাম 'প্রাণরস চোষা সামুদ্রিক শ্লাগ' বা 'স্যাকোগ্লোসানস'।
উদ্ভিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এদের শরীরে ক্লোরোফিল থাকে। ক্লোরোফিলের জন্যই গাছের পাতা, সবজি, শেওলা-সবার রং হয় সবুজ। এই ক্লোরোফিলের সাহায্যে এরা সূর্যের আলো ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদন করে, মানে খাবার খাওয়ার কাজ সেরে নেয়। এই প্রক্রিয়ার বৈজ্ঞানিক নাম ফটোসিনথেসিস। সামুদ্রিক জাতের ওই শ্লাগগুলো যখন জন্মায়, তখন কিন্তু ওদের শরীরে ক্লোরোফিলের ছিটেফোঁটাও থাকে না। কিন্তু এরা যত উদ্ভিদ খেতে থাকে, ততই এদের শরীরে ক্লোরোফিল জমতে থাকে।
এই শ্লাগগুলো আসলে অন্য শ্লাগদের মতো শেওলা খেয়ে পুরোটাই হজম করে ফেলে না। এরা শেওলার তন্তু বা আঁশ থেকে সরাসরি কোষের কিছু উপাদান শুষে নেয়। অনেকটা স্ট্র দিয়ে জুস খাওয়ার মতো। এই যেমন ক্লোরোফিল বা ক্লোরোপ্লাস্ট এবং এই ক্লোরোফিল নিজের শরীরের বিভিন্ন কোষে চালান করতে থাকে। অদ্ভুত এই প্রক্রিয়ার নাম ক্লেপ্টোপ্লাস্টি। জন্মের সময় এই শ্লাগগুলোর রং থাকে লালচে বা ধূসর। যত ক্লেপ্টোপ্লাস্টি হতে থাকে, মানে ওরা যত শেওলা খেতে থাকে, ততই ওদের গায়ের রং সবুজাভ হতে থাকে।
এই সবুজ রং আবার ওদের আরেক কাজে লাগে। আগেই বলেছি, শ্লাগদের গায়ে কোনো খোলস থাকে না। তার ওপর ওরাও শামুকের মতোই ধীরগতির। কাজেই ওদের শরীরে শত্রুর আক্রমণ মোকাবিলা করারও তেমন ব্যবস্থা নেই, পালানোরও তেমন সুবিধা নেই। কাজেই ওদের বাঁচার উপায় হলো লুকিয়ে থাকা। আর গায়ের রং সবুজ হলে ওরা শেওলার গায়ে কিংবা সাগরের তলদেশের সবুজ অংশে বেশ ভালোভাবেই লুকিয়ে থাকতে পারে।
ক্লেপ্টোপ্লাস্টি প্রক্রিয়া মোটামুটি সম্পন্ন হয়ে গেলে ওদের গায়ের রং একদম উজ্জ্বল সবুজ হয়ে যায়। তখন ওদের আর কষ্ট করে খাবারদাবার খুঁজে বেড়াতে হয় না, সূর্যের আলোর নিচে পড়ে থাকলেই চলে। এটা ওদের মতো অলস প্রাণীদের জন্য আদর্শ ব্যবস্থা। এভাবে কোনো কিছু না খেয়ে, স্রেফ সূর্যের আলোয় ফটোসিনথেসিস করে শক্তি উৎপাদন করে ওরা বাঁচতে পারে টানা এক বছর পর্যন্ত। এ জন্য ওদের আরেকটা নাম দেওয়া হয়েছে 'সৌরশক্তিসম্পন্ন সামুদ্রিক শ্লাগ' বা 'সোলার-পাওয়ার্ড সি শ্লাগ'।
বিজ্ঞানীদের আরেকটা বিষয়ে খটকা লাগে। কেবল ক্লোরোফিল হলেই কি ফটোসিনথেসিস করা যায়? অবশ্যই না। তাহলে এই শ্লাগগুলো কিভাবে ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়ায় শক্তি উৎপাদন করে বা খাবার বানায়, তারও উত্তর পাওয়া গেছে। সে উত্তর আরো বেশি কৌতূহল জোগায়। ক্লেপ্টোপ্লাস্টি প্রক্রিয়ায় ওরা যখন শেওলার কোষ থেকে ক্লোরোফিল শুষে নেয়, তখন ওরা কোষগুলো থেকে শেওলার জিনও শুষে নেয়। ফলে শেওলার জিনগত বৈশিষ্ট্য চলে আসে
ওদের ডিএনএতেও। এর ফলে ওরা ক্লোরোফিল দিয়ে ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়ায় খাবার বানাতে পারে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন