ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ইউসুফ (৩৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার রাত আনুমানিক পৌনে ২টার দিকে উপজেলার খেজুরবাগ সাতপাখি মুসলিমনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি, বন্দুকযুদ্ধে নিহত ইউসুফ ডাকাত সরদার। তার নামে ঢাকা জেলার বিভিন্ন থানায় খুনসহ ডাকাতির ১০টি মামলা রয়েছে। এদিকে নিহতের পরিবারের দাবি, ইউসুফ নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লা দেলপাড়া এলাকায় মাছের খামাড়ে কাজ করে। পুলিশ তাকে আটক করে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। নিহতের পরিবার সে টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তাকে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় ইসমাইল সরদার (২৯) ও সোহরাব (৩০) নামে দুই যুবককে আটক করেছে পুলিশ। আটক ইসমাইলের গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুর জেলার গোসাইরহাট থানার মধ্য মাতোয়াখালি গ্রামে তার পিতার নাম আব্দুল জলিল। সে বর্তমানে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন বন্দ ডাকপাড়া এলাকায় ভাড়া থাকে। আর সোহরাবের বাড়ি মাদারিপুর জেলার কালকিনি থানার আওলিয়ার চড় গ্রামে তার পিতার নাম মোঃ হালিম। সে বর্তমানে বাদামতলী এলাকায় ভাসমান অবস্থায় বসবাস করে। এ ঘটনায় নিহত ইউসুফের গ্রামের বাড়ি ঢাকা জেলার দোহার থানার হাজার বিঘা গ্রামে। তার পিতার নাম মৃত আইয়ুব আলী। সে নারায়গঞ্জ জেলার ফতুল্লা দেলপাড়া এলাকায় জাহাঙ্গীর মেম্বারের বাড়িতে ভাড়া থাকে।
এ বিষয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পাই ১০/১২ জনের একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল শুভাঢ্যা ইউনিয়নের খেজুরবাগ সাতপাখি মুসলিমনগর এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ গতকাল শনিবার রাত আনুমানিক পৌনে ২টার দিকে ওই এলাকায় অভিযান চালায়। সংঘবদ্ধ ডাকাতদলটি পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এ সময় পুলিশও জানমাল রক্ষার্থে পাল্টা ১০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি ও ১৫ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়ে। উভয় পক্ষের গুলির শব্দ থেমে গেলে পুলিশ এগিয়ে গিয়ে ইউসুফকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মাটিতে পরে থাকতে দেখে। এ সময় ইউসুফের সঙ্গীরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ইসমাইল ও সোহরাব নামে দুই ডাকাতকে আটক করে পুলিশ। এর পরে ওই রাতেই গুলিবিদ্ধ ইউসুফকে আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে ৭.৬৫ বোরের ২ রাউন্ড গুলিসহ ১টি বিদেশি পিস্তল ও দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মনিরুজ্জামান, সহকারী উপ-পরিদর্শক মফিজুল ইসলাম, কনস্টেবল আশ্রাফুল, আমির ও ইসহাক আহত হয়। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী সুলতানা বেগমের সাথে কথা হলে তিনি অভিযোগ করে বলেন, গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে ফতুল্লা দেলপাড়া এলাকা থেকে আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে আসে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। পরে আমি থানায় আসলে আমার স্বামীর সাথে পুলিশ আমাকে দেখা করতে দেয়নি। বরং একজন পুলিশ সদস্য আমার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৩ লাখ টাকা দাবি করে। আমি ৫০ হাজার টাকা যোগার করেছিলাম কিন্তু তারা আমার কথা শোনেনি। আজ রবিবার সকালে টিভিতে দেখি কেরানীগঞ্জে পুলিশের গুলিতে একজন মারা গেছে। পরে মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে এসে আমার স্বামীর লাশ শনাক্ত করি।
তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী ফতুল্লার দেলপাড়া এলাকায় একটি মাছের খামাড়ে কাজ করতো। পুলিশ তাকে ধরে এনে মেরে ফেলেছে। ২ মেয়ে (ইতি, তিথি) ১ ছেলে (মোরনসালিন) নিয়ে এখন আমি কোথায় গিয়ে দাড়াবো। আমি এর বিচার চাই।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, নিহত ইউসুফ ডাকাত দলের সরদার ও আটক দুজন ওই দলের সক্রিয় সদস্য ছিল। ঘটনাস্থল থেকে দুটি গুলিসহ একটি পিস্তল ও কয়েকটি দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি জানান, নিহত ইউসুফের বিরুদ্ধে ঢাকা জেলার বিভিন্ন থানায় খুনসহ ডাকাতির ১০টি এবং আটককৃতদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে থানায় অস্ত্র, ডাকাতির প্রস্তুতি ও হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আজ রবিবার আটককৃতদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন