১৫ আগস্টের পর নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে জীবন যাপন করতে হয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বজনদের। সেই সংগ্রামী জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে শেখ ফজলুল হক মনির ছোট ছেলে শেখ ফজলে নূর তাপস চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ওই সময় আমাদের কেউ বাসা ভাড়া দিতো না, স্কুলেও ভর্তি নিতো না। যাও বা ভর্তি হতাম, কিছুদিন পরই স্কুল পরিবর্তন করতে হতো।
বর্বরতার চরম নজীর স্থাপন করা সেই ভোরে সস্ত্রীক আরজু মনিসহ নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বঙ্গবন্ধুর মেজোবোনের বড় ছেলে শেখ ফজলুল হক মনি এবং তার শ্বশুর ও মন্ত্রিসভার সদস্য আবদুর রব সেরনিয়াবাতসহ আরো কয়েকজন।
ওই সময় সোয়া চার বছর বয়সী তাপস স্মৃতিচারণ করে বলেন, ঘাতকরা এতোটাই নির্মম ছিলো যে সবাইকে একটা অন্ধকার ঘরে নিয়ে ব্রাশফায়ার করে। তারা চেয়েছিলো বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউ যেনো বেঁচে না থাকে।
তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তাপস এবং তার বড় ভাই শেখ ফজলে শামস পরশ।
তিনি বলেন, রাতে আমরা দুই ভাই একই বিছানায় ঘুমাচ্ছিলাম। ভোরের দিকে গুলির আওয়াজে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। আমরা দৌড়ে বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করলে, চাচি আমাদের দু’ভাইকে ঘরের এক কোণে লুকিয়ে রাখেন।
১৫ আগস্টে বাবা-মামা-নানা-নানী, আত্মীয়-পরিজন হারানো তাপসের সামনের পথটা আরও বন্ধুর ছিলো।
মা-বাবাকে হারানোর পর তাপস ও তার ভাই পরশ নিকট আত্মীয়র মাধ্যমে পাড়ি জমান ভারতে। সেখানে তিন বছর কাটিয়ে দেশে ফেরেন ১৯৭৯ সালে।
দেশে আসার পর তাদের সামনে প্রতিদিনই এসেছে কোনো না কোনো নতুন প্রতিবন্ধকতা। স্কুলে ভর্তি হতে গেলে কোনো স্কুলই তাদের ভর্তি নিচ্ছিলো না।
অবশেষে উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও স্কুল কমিটির সাথে ঝামেলার কারেণে এ স্কুলও ছাড়তে হয়। এভাবে ওইসময় তিনটি স্কুল পরিবর্তন করেন তারা।
‘আমরাদের তো প্রথম প্রথম কেউ বাসা ভাড়াও দিতে চাইতো না। যাও দিতো! তাদেরকে ঘাতকদের পক্ষে হুমকি দেওয়ার কারণে কোনো বাসাতেই আমরা বেশি দিন থাকতে পারিনি। এভাবে যে কতো বাসা পরিবর্তন করতে হয়েছে!’
এমনকি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময়েও তার উপর হত্যা চেষ্টা চলেছে। এতো কিছুরপরও আজকের এই বাংলাদেশের জন্য আশাবাদী ফজলে নূর তাপস এমপি।
তাপস বলেন, যে উদ্দেশ্যে ঘাতকেরা ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলো তা সফল হয়নি। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন