প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ছয় বিশিষ্ট নাগরিককে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে জামায়াত-শিবির। সংগঠনটির ‘হিট লিস্টে’ রয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল ও ডা. ইমরান এইচ সরকার। দেশে পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি ও যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে এমন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে। সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে কেন্দ্রীয় শিবিরের সাবেক সভাপতি মো. জাহিদুর রহমান ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদ উদ্দিনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রিমান্ডে নেয়। তাদের মোবাইল ও ল্যাপটপ বিশ্লেষণ করে জামায়াত-শিবিরের নাশকতার নকশা ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। শিবির নেতা জাহিদুর ও আসাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার অনুমতি চেয়ে ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছে পুলিশ। এ ছাড়া জামায়াত-শিবিরের অন্য একটি গ্রুপ তুরস্কের ‘গুলেন মুভমেন্টের’ আদলে প্রকাশ্য নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করছে। এই গ্রুপের অধিকাংশ দলে ‘সংস্কারপন্থী’’ হিসেবে পরিচিত। এর নেতৃত্বে রয়েছেন ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। এই গ্রুপের অধিকাংশ সদস্য ‘সহিংসতাবিরোধী’। ব্যারিস্টার রাজ্জাক এখন বিদেশে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, বিশিষ্টজনকে হত্যার ষড়যন্ত্র, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। জামায়াতের একটি অংশ তুরস্কের ‘গুলেন মুভমেন্টের’ আদলে নেটওয়ার্ক করার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিবির ডিসি (পশ্চিম) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, গত মাসে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে শিবিরের দুই নেতা আসাদ ও জাহিদুরকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, দুই শিবির নেতার ল্যাপটপ ও মোবাইল থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে দুটি ধারা বা গ্রুপ তৈরি করা হবে। প্রথমটি গোপনে সংগঠিত হবে এবং গোপনেই কার্যক্রম চালাবে। দ্বিতীয়টি প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালাবে এবং নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করবে। প্রধানমন্ত্রীসহ ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার মধ্য দিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্তিতির অবনতি ঘটিয়ে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা করে তারা। এ লক্ষ্যে তারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিশ্বস্থকর্মী সংগ্রহ করে কোচিংয়ের নামে ঢাকায় নিয়ে আসে। এর পর পাঁচ-সাতজন সদস্য নিয়ে ছোট ছোট দলে ভাগ করে ‘স্মল সেল টেররিজম’ গ্রুপ তৈরি করে। ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় এক থেকে তিন মাসের জন্য বাসা ভাড়া নিয়ে কথিত আকিদা, নিরাপত্তা কৌশল, অস্ত্র পরিচালনা ও বিস্ফোরক ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সংগ্রহের পর তা ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে রাজধানী ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় পাঁচ-সাতজনের ৭-১০টি দল অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তৎপর রয়েছে। অত্যন্ত- গোপনে জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে ‘আইএস, একিউআইএস’, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের নামে ‘দায়’ স্বীকার করে ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সরকারকে ‘ব্যর্থ’ প্রমাণ করতে আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত- এ ধরনের নাশকতা অব্যাহত রাখার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি ঘিরে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নাশকতা করে সরকারকে আরও চাপে রাখতে চায় জামায়াত-শিবির। তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, জামায়াত-শিবিরের আরেকটি গ্রুপ তুরস্কের ‘গুলেন মুভমেন্টের’ আদলে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করছে। এ লক্ষ্যে গত ২১ অক্টোবর তুরস্কে একটি সেমিনারের আয়োজন করে জামায়াত। ‘ক্রস কান্ট্রি ফিউশন’ নামে সেমিনারের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে। জামায়াতের যে অংশটি তুরস্কের ‘একে’ পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে তাদের কারও কারও অতীত কর্মকাণ্ড স্বচ্ছ। আবার কেউ কেউ সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গোয়েন্দারা বলছেন, জামায়াত-শিবিরের এই গ্রুপকে পরামর্শ দিচ্ছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা বর্তমানে বিদেশে অবস্থা নরত ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকসহ ১৩ জন। অন্যরা হলেন জামায়াত নেতা রাজ্জাকের সহকারী ব্যারিস্টার ফুয়াদ, ব্যারিস্টার জুবায়ের, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মজিবুর রহমান মঞ্জু, জাহিদুর রহমান, অ্যাডভোকেট শিশির মনির, রেজাউল করিম, ডা. লকিয়াত উল্লাহ, আলম শরীফ, আহসান হাবিব ইমরোজ, ড. আবু ইউসুফ, ড. মিনার, ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক সচিব শাহ আবদুল হান্নান ও ড. মিয়া মো. আইয়ুব। সূত্র. সমকাল।
Home Unlabelled প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র ।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন