মো. বাদশা মিয়া জাল টাকা তৈরির একটি চক্রের মূল হোতা। অন্তত ১০ বছর ধরে দেশি-বিদেশি জাল মুদ্রা তৈরি করে তিনি বাজারজাত করছেন। আর এই কাজ করতে গিয়ে পুলিশের কাছে ধরাও পড়েছেন একাধিকবার। কিন্তু আইনের ফাঁক গলিয়ে জামিনে বের হয়ে আবারও একই কাজে লিপ্ত হচ্ছেন তিনি।
বাদশা মিয়া এবার তার ৫ সহযোগীসহ এক কোটি ২০ লাখ জাল মুদ্রা নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ধরা পড়লেন। মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া বাদশার সহযোগীরা হলেন- আব্দুল জলিল, জয়নাল খন্দকার, বায়েজিদ বোস্তামী, মহসিন ওরফে ওয়াসিম ও মো. সোহাগ।
গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, বর্তমানে বাদশা দুইটি মামলায় জামিনে থাকলেও একটি মামলায় পলাতক রয়েছেন। তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও জামিন নিয়ে আবারও একই কাজে লিপ্ত হন। জাল টাকা তৈরি থেকে শুরু করে সারাদেশে রয়েছে তার বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। বাদশার নেতৃত্বে এই চক্রটি টাকা, ভারতীয় রুপি, ডলারসহ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মুদ্রা তৈরি করে বাজারজাত করে।
এই চক্রের ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিএমপির গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, চক্রটি ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করে কারখানা স্থাপন করে। তারা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে জাল টাকা তৈরির কারখানা স্থাপন করে।
তিনি বলেন, ‘বাদশার সহযোগীরা টাকার যাবতীয় বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখে কাগজ তৈরি করে তার চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করে। এরপর জাল টাকা ও ডলার তৈরি করে সারাদেশে সরবরাহ করা হয়।’
ঈদের সময় জাল টাকার লেনদেন বেশি হয় জানিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই সময়কে কাজে লাগিয়ে তারা সারাদেশে জালটাকা সরবরাহ করার পরিকল্পনা করেছিল।’
অভিযানের নেতৃত্বদানকারী গোয়েন্দা কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মাহমুদ নাসের জনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘বাদশা দীর্ঘদিন ধরেই এই কাজ করে আসছে। সে এর আগেও পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে। জামিনে বের হয়ে সে আবারও একই কাজে লিপ্ত হচ্ছে।’
এদিকে তাদের হেফাজত থেকে ১ কোটি ২০ লাখ জালটাকসহ টাকা তৈরির কাগজ, ২০টি ফ্রেম, রঙ, নিরাপত্তা সুতা, ৫টি ল্যাপটপ, ১টি ডেক্সটপ, ৫টি প্রিন্টার ও টাকা তৈরির অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
এ প্রসঙ্গে গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের ডিসি (ডিবি) মো. সাজ্জাদুর রহমান (পশ্চিম) জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত মো. বাদশা মিয়া জানান- দীর্ঘ প্রায় ৯/১০ বছর ধরে সে জালটাকার ব্যবসার সাথে জড়িত। বিভিন্ন সময় সে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে জালটাকা তৈরির কারখানা স্থাপন করে বিপুল পরিমান জালটাকা, ভারতীয় রুপি, ডলার, ইউরোসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মুদ্রা তৈরি করে দেশব্যাপী বিস্তৃত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঢাকাসহ সারাদেশে বাজারজাত করে থাকে।
গ্রেপ্তারকৃতরা আরো জানায়, জাল টাকা তৈরির কার্যক্রম তিনস্থরে বিভক্ত। প্রথমে ধাপের সদস্যদের কাজ হলো টাকার যাবতীয় নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত কাগজ তৈরি করে বাদশা মিয়ার চাহিদা অনুয়ায়ী সরবরাহ করা। পরবর্তী সময়ে মো. বাদশা মিয়া, মো. আ. জলিল, মো. জয়নাল খন্দকার, মো. রায়েজিদ বোস্তামী, মো. মহসিন ওরফে ওয়াসিম এবং মো. সোহাগদের ওই কাগজে কম্পিউটার ও প্রিন্টারের মাধ্যমে টাকার ছাপ দিয়ে টাকা তৈরি করা। অন্য এক গ্রুপের কাজ হলো দেশব্যাপী বিস্তৃত সরবরাহকারী গ্রুপের মাধ্যমে ওই জালটাকা বাজারজাত করা। এই সরবরাহকারী গ্রুপে আছে সহযোগী পলাতক আসামি মাহবুব মোল্লা, সেলিম মিয়া, হানিফ গাজী, জামান, ইমন ও রাজু।
তারা জানায়, মূলত আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে যখন সারাদেশ টাকা পয়সা লেনদেন বেড়ে যায় এই সময় তারা দেশব্যাপী জালটাকা সরবরাহের কাজ করছিল।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন