চট্টগ্রামে নেংটা ফকিরের আস্তানায় হানা দিয়ে ফকিরসহ দুই জনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল (শুক্রবার) বেলা পৌনে ২টায় নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার পূর্ব অঞ্চল হাউজিং সোসাইটির আকবর টিলা এলাকায় এই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। নিহত দুজন হলেন রহমত উল্লাহ ওরফে নেংটা ফকির (৫৫) ও তার সহকারী আবদুল কাদের (৩০)। কথিত ওই ফকিরের আস্তানাটি এলাকাবাসীর কাছে ‘নেংটা মামুর মাজার’ হিসাবে পরিচিত।প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে দুই জনকে হত্যার পর খুনি দৌড়ে পালায়। এসময় তাকে ধরতে গিয়ে মো. মনির (২৬) ও মো. মুন্না (৭) নামে দুইজন হাত বোমার স্পিøন্টারে আহত হয়েছেন। রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত হত্যাকা-ের কারণ জানা যায়নি। চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কথিত ওই মাজারের বিরোধীরা এই ঘটনায় জড়িত। এ ছাড়া আস্তানা নিয়ে টাকা পয়সার দ্বন্দ্বেও জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সুমন নামে প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় যুবক জানান, ২০বছর ধরে আধাপাকা এক কক্ষবিশিষ্ট কথিত এ আস্তানায় থাকতেন রহমত উল্লাহ। পাহাড়ের পাদদেশে জমি দখল করে এই আস্তানাটি গড়ে তোলা হয়। কয়েক বছর ধরে আছেন তার সহকারী কাদেরও। দুপুরে ওই আস্তানায় ঢুকে দুজনকে গলা কেটে হত্যার পর প্যান্ট-শার্ট পরা এক যুবক পাহাড়ের দিকে দৌড়ে পালাতে থাকেন। এ সময় মনির ও শহিদ মুন্না নামে স্থানীয় দুই যুবক ধাওয়া করলে ককটেল ছুঁড়ে তিনি পালিয়ে যান। ককটেলের আঘাতে দুই যুবকই আহত হন। পরে তাঁদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বোমায় আহত মনির জানান, জুমার নামায শেষে বাসায় ঢোকার পর এক যুবককে হাতে কিরিচ ও একটি ব্যাগ নিয়ে হেঁটে আসতে দেখা যায়। এসময় উপরের থেকে লোকজন চোর চোর বলে চিৎকার করলে সে দৌড়ে পালানোর সময় তাকে জাপটে ধরে ফেলি। এ সময় সে ব্যাগ থেকে বের করে দুইটি বোমার বিষ্ফোরণ ঘটায়। আনুমানিক ২৭ থেকে ২৮ বছর বয়সী ছেলেটি প্যান্ট ও লাল গেঞ্জি পড়া ছিল বলে জানান মনির। যুবকটি পালিয়ে যাওয়ার পর স্থানীয়রা আস্তানায় গিয়ে দুইজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এসময় স্থানীয় লোকজন কাদেরকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সিএমপির উপ-কমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ জানান, বেলা দেড়টা থেকে পৌনে দুইটার মধ্যে এই হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটেছে। মাজারের ভেতরে নেংটা মামুকে শোয়ানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। তার খাদেম ‘হত্যাকারীকে’ ধরে ফেললে তাকেও গলায় ছুরি মারা হয়। হত্যাকা-টি ‘পরিকল্পিত’ মন্তব্য করে পুলিশ কর্মকর্তা পরিতোষ বলেন, নেংটা মামুর গলার ডান দিকে ছুরিকাঘাত ছাড়া শরীরে অন্য কোনস্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। এ দিকে আস্তানা থেকে একটি লাল, সবুজ, কালো রঙের একটি গেঞ্জি উদ্ধার করেছে পুলিশ।সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) শরীফুল ইসলামের ধারণা হত্যাকা- ঘটিয়ে যুবকটি গেঞ্জি পাল্টে চলে যায়। আস্তানায় নিয়মিত যাতায়াতকারী মো. শাহাবউদ্দিন জানান প্রায় ২০ থেকে ২৫ ধরে রহমত উল্লাহ ওই এলাকায় বাস করছেন। স্থানীয় লোকজন তাকে ‘নেংটা মামু’ বলে সম্বোধন করেন। আগে পাশে একটি স্থানে টিনের চালা বেড়ার ঘরে থাকলেও চার পাঁচবছর ধরে তিনি এই জায়গাটিতে পাকা ঘরে থাকেন। তবে তিনি কোথা থেকে এসে এ এলাকায় আস্তানা গড়ে তুলেন তা কেউ জানেন না। নিহত খাদেম কাদের প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর ধরে নেংটা মামুর সাথে থাকেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় লোকজন। তার গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলায়। সপ্তাহে প্রতি বৃহস্পতিবার সেখানে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। তাতে লোকজন অংশ নিতো। ঘটনাস্থলে নগর পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি, নগর গোয়েন্দা পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এবং র্যাব সদস্যরাও পরিদর্শন করেছেন। সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য্য বলেন, ফকিরের সাথে কারো কোন ধরনের বিরোধ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি ‘মাজার বিরোধী গোষ্ঠীর’ সদস্যরা হত্যাকা-ের সাথে জড়িত কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
Home Unlabelled নেংটা ফকিরের আস্তানায় হানা দিয়ে ফকিরসহ দুই জনকে গলা কেটে হত্যা .
নেংটা ফকিরের আস্তানায় হানা দিয়ে ফকিরসহ দুই জনকে গলা কেটে হত্যা .
By Unknown At শনিবার, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৫ 0
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন